Sunday, October 27, 2019

ভাল কাজ সব সময় ভাল জিনিস বয়ে আনে (সত্য ঘটনা)
রিফাত ( কাল্পনিক নাম ) খুব ভাল ছেলে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মস্জিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করে। আশে পাশের বাড়ীতে কেউ মারা গেলে তাকে গোসল দেওয়ার কাজটিও সে ভালভাবে শিখে নিয়েছে। একবার রিফাত তাবলীক জামাতে যান। যে মস্জিদে যান সেখানে পাশেই একটি থানা ছিল। তারা গিয়ে শুনতে পায় অত্র এলাকাতে একটি খুন হয়েছে, খুন হওয়া ব্যক্তিটি ভাল মানুষ ছিল। হসপিটাল থেকে পোষ্টম্যাডাম করে থানাতে লাশ আনা হলো। বিকাল দিকে দুই জন পুলিশ এসে সালাম দিয়ে আমিরসাব হুজুরকে বলল হুজুর থানাতে একটি লাশ আছে কেউ ভয়ে গোসল করাতে চাচ্ছে না দয়া করে আপনাদের মধ্যে কেউ যদি একটু গোসলটা করিয়ে দিতেন। তখন রিফাত বলল হুজুর অনুমতি দিলে আমি গোসল করাতে পারি। তার পার রিফাত গোসল করাল আর আমিরসাব হুজুর যানাজার নামাজ পড়ালো। সব ভালভাবেই শেষ হলো। এর পরের দিনের তাবলীক জামাতে আসা এক সঙ্গীর ভীষণ স্বাশকষ্ট শুরু হল। স্বাশকষ্টে তার চোখ বড়, বড় হয়ে যাচ্ছে রাত প্রায় নয়টা বাজে। আমিরসাব হুজুর রিফাত কে বলল দেখ রিফাত কোন রিক্সা পাওয়া যায় কিনা তুমি আর একজনকে নিয়ে বাজার থেকে তার জন্য ইনহেলার সহ যা ঔষধ দরকার নিয়ে আস। এখানে বলা দরকার যে, এই মস্জিদ থেকে বাজার, রিক্সার পথ প্রায় ৪০ মিনিট।  রিফাত আরও একজনকে নিয়ে রাস্তার উপর গিয়ে দেখে একজন রিক্সাওয়ালা গামছা দিয়ে তার মুখটা ঢেকে রেখেছেন। যখন তারা জিজ্ঞাস করল ভাই যাবেন? রিক্সা চালক বললেন বসেন। রিফাত আর তার সাথী কোথায় যেতে হবে কিছুই বলেনি রিক্সা চালককে। রিক্সাওয়ালা (রিক্সাটি ছিল পায়ে পেডেল দিয়ে চালাতে হতো) এত জোরে রিক্সা চালাতে লাগল তাদের কাছে মনে হলো তারা কোন মাক্রোবাসে উঠে বসেছে। প্রায় পাঁচ মিনিটে বাজারে এসে সবচেয়ে বড় ফামের্সীর সামনে রিক্সা থামালো। রিফাত যথা নিয়মে ঔষধ কিনে রিক্সায় বসল। রিক্সাও ঠিক আগের মতোই প্রায় পাঁচ মিনিটে  মস্জিদের সামনে আসল। রিফাত সাথী ভাইকে সব ঔষধ হাতে দিয়ে রোগীকে দিতে বলল। আর রিফাত রিক্সা ওয়ালাকে ভাড়া দিতে তার পকেট থেকে টাকা বের করল। অল্প আলোতে রিক্সা ওয়ার মুখের গামছাটা নিচে পড়ে গেল আর রিফাত হতবাক হয়ে গেল, গত কালকে যাকে থানাতে গোসল করিছে এই সে রিক্সা ওয়ালা। রিফাত কিছুটা ভয় পেয়ে টাকা দিতে চাইল, লোকটি কান্না কন্ঠে বলল ভাই আমি আপনার কাছ থেকে কিভাবে টাকা নেই। কাল যদি আপনি আমাকে গোসল না করাতেন হুজুর যদি জানাযা না পড়াতেন তাহলে আমি গোসল ছাড়া, জানাযা ছাড়া কবরে শুতাম বলেই লোকটি চোখের পলকে ভ্যানিশ। আসলে যে কোন ভাল কাজ ভাল জিনিস বয়ে আনে এটা তারই প্রমাণ।  

মানিকের ভয়ানক রাত্রির কথা
মানিক নামে কোন এক গ্রামে ডানপিটে, চঞ্চল, সাহসী ছেলে ছিল। জমিদার বাড়ীর একমাত্র পুত্র সন্তান হওয়ার ফলে পরিবার থেকে তাকে তেমন কোন শাসন করা হতো না। মানিকের যখন যা খুশি তাই করত। তিন গ্রাম পরে যাত্রা শুরু হয়েছে। মানিক সকাল থেকে সেই যাত্রা দেখার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে এবং তার ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ল যাত্রার উদ্দেশ্যে। যথা নিয়মে যাত্রা শেষ করে এখন বাড়ী ফেরার পালা। রাত প্রায় ১২ টা। সে তার ঘোড়া ছুটিয়ে ফেরির কাছে চলে আসল। ফেরিতে যখন উটল তখন ফেরিতে থাকা লোকটি বলল এত রাতে যাচ্ছেন আপনার ভয় লাগেনা? এখানকার জায়গাতো ভাল না। মানিক হেসে বলল আমাকে দেখে চোর, ডাকাত ভয় পায়। ফেরির লোকটি বলল আমি যাদের কথা বলছি তারা মানুষ না জ্বীন। মানিক হেসে বলল আমি এসব বিশ্বাস করি না। ফেরির লোকটি বলল ভাই আপনি সোজা রাস্তায় যাবেন ভুলেও বামের রাস্তাতে যাবেন না। সেই রাস্তাটি খুবই খারাপ। মানিক তার কথাতে কোন প্রকার গুরুত্ব দিল না ফেরি পার হয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলল। দুই রাস্তার সামনে এসে মানিক দেখল তার ঘোরা আর পা চালাচ্ছে না, একদম থেমে গেল। সে ভাবল সারাদিন পরিশ্রম করাতে এরকম হয়েছে হয়ত, তাছাড়া যাত্রা দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকাতে ঘোড়াকে কিছুই খাওয়ানো হয়নি। রাতের বেলাতে কি আর করা যায়। দেখি একটু পানির ব্যবস্থা করা যায় কিনা। বামের রাস্তার শেষে দেখা যায় একটু আলো জ্বলছে। মানিক সেখানে গেল পানির আশায়। দেখল একটি ছোট বাড়ী সেখানে একটি মহিলা রান্না করছে, উল্টো দিকে ফিরে। মানিক বলল আমাকে একটু পানি দিতে পারেন। মহিলার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। মানিক আবারো পানি চাইল। এর পর তৃতীয় বার মানিক জোরে বলে উটল কি ব্যপারে কথা কানে যায় না! এবার মহিলাটি ঘুরে তাকাল মানিকের দিকে, মানিক তার জীবনের প্রথম ভয়টি পেল তখন, সে দেখল গোমটা পরা মহিলাটির দুই চোখ নেই, চোখের জায়গায় দুটি গরত। মানিক পিছন ফিরে বড় রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করল আর ফেরির লোকটি কথা মনে পড়ল, তিনি তাকে বামের রাস্তাতে যেতে বারণ করেছিল। বড় রাস্তার উপর এসে নিজেকে খুবই দুরবল ভাবতে লাগল আর ভয় তাকে পেয়েই বসেছে। ঘোড়া নিয়ে আস্তে, আস্তে সোজা হাটছিল মানিক। ঠিক তখনই সে দেখতে পেল সাদা পায়জামা আর পাঞ্জাবি, টুপি পড়া চারজন ব্যক্তি তার দিকে আসছে। মানিক খুব ভয় পাচ্ছে উনাদের দেখে। লোক চারজন মানিক এর কাছে এসে একজন সালাম দিয়ে বলল আরে মানিক ভাই কেমন আছেন? এত রাতে কোথা যাচ্ছেন। উত্তরে মানিক বলল আমিতো আপনাদের চিনি, না আর কখনও তো দেখিনি। প্রতি উত্তরে লোকটি বলল আমি তো আপনাকে খুব ভাল করেই চিনি, আপনি সরকার বাড়ীর ছেলে মালিক ভাই না। তখন মানিকের ভয় কাটল, বলল হ্যাঁ। তাদের মধ্যে একজন বলল বাড়ী যাবেন , আসুন আমার সাথে। বলে নিয়ে আসল একটি গাছের নিচে। বলল আপনি ঘোড়া বেঁধে গাছের নিচে বিশ্রাম নেন, আমি ফিরে না আসা সময় আপনি এখানেই থাকেন বলে লোকটি তার কাছ থেকে বিদায় নিল। গাছের নিচে বসে মানিক ঘুমিয়ে পড়ল। ফজরের নামাজ শেষে মানিকের ঘুম ভাঙ্গল।  সে দেখল সে একটি কবরস্থানে বসে আছে। কাছের মস্জিদের ঈমাম হুজুর মানিককে জিজ্ঞাস করল অনেকক্ষণ যাবৎ দেখছি, আপনি এখানে কি করছেন। মানিক তার সাথে যা যা হলো সব হুজুরকে বলল। হুজুর বলল প্রাণে বেঁচে গেছ, তুমি প্রথমে যে মহিলাকে দেখেছ সে হচ্ছে খারাপ জ্বীন এবং পরের চার জন তারা হচ্ছে ভাল জ্বীন তাই তোমাকে নিরাপদে রেখে গেছেন।